গাজীপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Gazipur Technical Training Centre, GTTC)
- আপডেট সময় ১০:০৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৬ বার পড়া হয়েছে
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, টিটিসি)
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে গাজীপুর জেলার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি বাংলাদেশের শিল্প ও উৎপাদন খাতে কার্যকর অবদান রাখছে। গাজীপুর দেশের অন্যতম শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এবং এখানে গড়ে ওঠা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি স্থানীয় যুবসমাজকে কর্মক্ষম করে তুলতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভূমিকা
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি মূলত বিভিন্ন কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। গাজীপুরে অবস্থিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে বিভিন্ন বিষয় যেমন বিদ্যুৎ প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েল্ডিং, কম্পিউটার পরিচালনা, গার্মেন্টস টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে চাকরির যোগ্যতা অর্জন করে থাকে।
গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিশেষত্ব
গাজীপুর একটি শিল্পসমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় এখানে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুসারে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। গাজীপুরের টিটিসি গুলিতে প্রশিক্ষণের মান উচ্চমানের হওয়ায় এখান থেকে দক্ষ শ্রমিক তৈরি হচ্ছে, যারা স্থানীয় এবং বিদেশি শ্রমবাজারে কর্মরত হচ্ছে।
এছাড়া গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যা শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে। এখানে প্রশিক্ষণার্থীরা বাস্তবজীবনে কার্যকরী এবং প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এই কেন্দ্রগুলিতে সাধারণত থিওরি এবং প্র্যাকটিক্যাল উভয় প্রশিক্ষণই প্রদান করা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞানই না, বাস্তব দক্ষতাও অর্জন করতে পারে।
আরও পড়ুন- নরসিংদী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রশিক্ষণের ধরন
গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করে। স্বল্পমেয়াদী কোর্সগুলি সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে শেষ হয়, যেখানে দীর্ঘমেয়াদী কোর্সগুলি ১ থেকে ২ বছর সময়ের হতে পারে। প্রশিক্ষণার্থীরা প্রশিক্ষণ শেষে সার্টিফিকেট পায় যা চাকরির জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়:
1. মেকানিক্যাল টেকনোলজি: যন্ত্রপাতি পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং মেরামত সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ।
2. ইলেকট্রিক্যাল টেকনোলজি: ইলেকট্রিক সার্কিট, ইনস্টলেশন, এবং মেইনটেনেন্সের ওপর প্রশিক্ষণ।
3. কম্পিউটার টেকনোলজি: কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং নেটওয়ার্কিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
4. ওয়েল্ডিং ও ফেব্রিকেশন: স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য ধাতুর কাজ ও সংযোজন বিষয়ে প্রশিক্ষণ।
5. গার্মেন্টস টেকনোলজি: তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন বিষয়ে যেমন নিটিং, সেলাই, এবং ডিজাইনের ওপর প্রশিক্ষণ।
শ্রমবাজারে অবদান
গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা, যারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে কাজ করতে পারে। গাজীপুর শিল্পনগরী হওয়ায় এখানে প্রশিক্ষিত কর্মীদের চাহিদা অনেক বেশি। এখানকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সহজেই স্থানীয় শিল্প-কারখানায় চাকরি পেয়ে থাকে, যা তাদের জীবনের মান উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতায় সহায়তা করে।
গাজীপুরে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে প্রশিক্ষণ নেয়া অনেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চাকরি করছে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে গাজীপুরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে দেশের রেমিটেন্স আয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারের উদ্যোগ ও সহযোগিতা
বাংলাদেশ সরকার টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল এডুকেশনকে (টিভিইটি) উৎসাহিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে অন্যতম হলো জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সহযোগিতায় কারিগরি শিক্ষার প্রসার। গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিও এই উন্নয়ন কার্যক্রমের আওতাভুক্ত এবং সরকার এখানকার প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে নিয়মিত পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার এ ধরনের কেন্দ্রগুলিতে আধুনিক সরঞ্জাম, প্রযুক্তি এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষক না থাকা এবং কারিগরি শিক্ষার প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব।
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি হতে পারে। স্থানীয় শিল্পায়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা পূরণে এসব কেন্দ্রগুলো ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গাজীপুরের মতো শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চলে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষ ও প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী কর্মী তৈরি করা সম্ভব।
➤ গাজীপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে- ক্লিক করুন