নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Narail Technical Training Centre)
- আপডেট সময় ০২:৪৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৮৬ বার পড়া হয়েছে
নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (নড়াইল টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার বা নড়াইল টিটিসি) , বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে এবং স্থানীয় যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের যোগ্য করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে দিন দিন কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে, এবং নড়াইল টিটিসি এ ক্ষেত্রে একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
নড়াইল টিটিসি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় যুবকদের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং তাদেরকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা। ১৯৯০-এর দশকে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে টিটিসি স্থাপন শুরু করে। নড়াইল অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করার লক্ষ্যে নড়াইল টিটিসি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ফলে এলাকার শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে কর্মজীবনে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছে।
অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা:
নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একটি আধুনিক অবকাঠামো দ্বারা সুসজ্জিত। এখানে রয়েছে প্রশিক্ষণ ল্যাবরেটরি, কর্মশালা, আধুনিক ক্লাসরুম, এবং একটি উন্নতমানের কম্পিউটার ল্যাব। শিক্ষার্থীরা এখানে প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে পারে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হয়। এছাড়াও, কেন্দ্রে ইন্টারনেট সুবিধা, পাঠাগার এবং অন্যান্য শিক্ষাসহায়ক সরঞ্জামের ব্যবস্থা রয়েছে।
কোর্সসমূহ:
নড়াইল টিটিসি বিভিন্ন ধরণের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক কোর্স পরিচালনা করে। এই কোর্সগুলো শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে দক্ষতা বাড়াতে এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করে। কেন্দ্রটি দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী উভয় ধরনের কোর্স চালু করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কোর্স হলো:
1. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং: এই কোর্সটি সাধারণত চার বছরের এবং এতে বিভিন্ন কারিগরি বিষয় যেমন মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং শেখানো হয়। শিক্ষার্থীরা এই কোর্স শেষে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ পায়।
2. শর্ট কোর্স: নড়াইল টিটিসি বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী কোর্স পরিচালনা করে, যা স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেয়। এর মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল রক্ষণাবেক্ষণ, মোটর গাড়ি মেকানিক্স, ওয়েল্ডিং এবং প্লাম্বিং উল্লেখযোগ্য।
3. আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) কোর্স: বর্তমান যুগের চাহিদা অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নড়াইল টিটিসিতে বিভিন্ন আইসিটি কোর্স যেমন কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন, এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শেখানো হয়, যা শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্যারিয়ার গড়তে সহায়ক।
প্রশিক্ষণের পদ্ধতি:
নড়াইল টিটিসির প্রশিক্ষণের পদ্ধতি অত্যন্ত প্রায়োগিক। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ শেখানোর মাধ্যমে তাদের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে প্রয়োগ করার দক্ষতা প্রদান করা হয়। ল্যাবরেটরি এবং কর্মশালাগুলোতে শিক্ষার্থীরা মেশিন, যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সরঞ্জাম পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা এই প্রশিক্ষণ থেকে সর্বোচ্চ উপকৃত হয়, যা তাদেরকে প্রতিযোগিতামূলক কর্মক্ষেত্রে যোগ্য করে তোলে।
আরও পড়ুন- মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আধুনিক অবকাঠামো দ্বারা সুসজ্জিত।
কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন:
নড়াইল টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক কর্মবাজারে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প, নির্মাণ শিল্প, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন ক্রমশ বাড়ছে। নড়াইল টিটিসি শিক্ষার্থীদেরকে এই খাতগুলোতে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা প্রদান করে। বিশেষ করে বিদেশে যারা কাজ করতে আগ্রহী, তারা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিদেশের শ্রমবাজারে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। এর ফলে তারা ভালো আয় করছে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ:
নড়াইল টিটিসি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কাজ করে প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নে কাজ করে থাকে। যেমন, আইএলও (আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা) এবং জাইকা (জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি)-এর মতো সংস্থাগুলো নড়াইল টিটিসির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মান উন্নয়নে সহায়তা করছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক মানের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হয়।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
নড়াইল টিটিসির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। কারিগরি খাতে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির কারণে, প্রতিষ্ঠানটিকে ক্রমাগত আধুনিকায়ন করতে হয়। এছাড়া, দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষার্থীদের জন্য আরও আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহ করার বিষয়েও প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে নড়াইল টিটিসি নতুন নতুন কোর্স চালু করে এবং প্রশিক্ষণের মান বাড়িয়ে আরও উন্নত কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে।
নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি স্থানীয় যুবসমাজকে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে গড়ে তুলছে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াচ্ছে। নড়াইল টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশ ও বিদেশে কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
➤ নড়াইল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে- ক্লিক করুন