নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Netrakona Technical Training Centre, NTTC)
- আপডেট সময় ০৬:৫৯:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪৯ বার পড়া হয়েছে
নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (NTTC) বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলার একটি বিশেষায়িত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা এলাকার যুব সমাজকে বিভিন্ন কারিগরি ও পেশাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। বাংলাদেশ সরকার কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে এবং এই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক শ্রমবাজারে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করা হচ্ছে। নেত্রকোণা TTC তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান, যা প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে থাকে।
প্রতিষ্ঠানের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বেকারত্ব দূরীকরণ এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিরলসভাবে কাজ করছে। বিশেষ করে, মধ্যম ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য কারিগরি শিক্ষা একটি সহজলভ্য এবং কার্যকর মাধ্যম, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
এই প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো তরুণদের এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে তারা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্পক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। নেতৃত্বের গুণাবলী, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের ও দেশের উন্নয়ন সাধন করাই এই কেন্দ্রের অন্যতম উদ্দেশ্য।
প্রশিক্ষণ ও কোর্সসমূহ
নেত্রকোণা TTC বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য বহুমুখী কারিগরি কোর্স প্রদান করে। এখানে শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাও গ্রহণ করতে পারে। যেসব ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল:
1. ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড: এই কোর্সে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে এবং বিদেশে ইলেকট্রিশিয়ানদের চাহিদা প্রচুর, তাই এই কোর্সের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা সহজেই কর্মসংস্থানের সুযোগ পান।
2. ওয়েল্ডিং: ওয়েল্ডিং পেশার চাহিদা বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান। এই ট্রেডে শিক্ষার্থীরা ধাতব পদার্থের বিভিন্ন অংশকে একত্রিত করার প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখে। নির্মাণ, জাহাজশিল্প এবং ভারী শিল্পক্ষেত্রে ওয়েল্ডারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
3. মেকানিক্যাল ট্রেড: মেকানিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, মেশিনের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত শিক্ষাদান করা হয়। এই কোর্স সম্পন্নকারীরা শিল্পখাতে বিশেষ করে গার্মেন্টস, উৎপাদন শিল্প এবং কল-কারখানায় কাজ করতে পারেন।
4. আইটি ও কম্পিউটার ট্রেনিং: কম্পিউটার শিক্ষা এখন সময়ের দাবি। আইটি ও কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পায়। বিভিন্ন সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার মেরামত, এবং নেটওয়ার্কিং সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
5. ড্রাইভিং ও গাড়ির মেরামত: এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা গাড়ি চালনা এবং গাড়ির বিভিন্ন সমস্যা মেরামতের দক্ষতা অর্জন করে। ড্রাইভিং একটি চাহিদাসম্পন্ন পেশা, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে দক্ষ ড্রাইভারের চাহিদা রয়েছে।
আরও পড়ুন- জামালপুর TTC স্থানীয়ভাবে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে
সুযোগ-সুবিধা
নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং পরিকাঠামো। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য রয়েছে উন্নতমানের ল্যাবরেটরি, যেখানে তারা ব্যবহারিক কাজের মাধ্যমে নিজেদের দক্ষতা উন্নত করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম এবং মেশিনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে।
এছাড়াও, এখানে রয়েছে প্রশিক্ষকদের অভিজ্ঞ দল, যারা শিক্ষার্থীদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করে। প্রশিক্ষণকালে শিক্ষার্থীরা ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট এবং ইন্টার্নশিপের সুযোগ পায়, যার মাধ্যমে তারা বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। এতে তাদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।
কর্মসংস্থান ও ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
নেত্রকোণা TTC থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। দেশের গার্মেন্টস শিল্প, নির্মাণ শিল্প, এবং অন্যান্য কল-কারখানায় কারিগরি দক্ষ কর্মীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া, বিদেশেও বাংলাদেশি কর্মীদের বিশেষ চাহিদা রয়েছে, যেমন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ওয়েল্ডার, ইলেকট্রিশিয়ান, এবং ড্রাইভারদের প্রচুর চাহিদা দেখা যায়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের অনেকেই তাদের নিজের উদ্যোগে কাজ শুরু করেন। অনেক সময় তারা ছোটখাটো ব্যবসা যেমন ইলেকট্রনিকস মেরামতের দোকান, গাড়ির গ্যারেজ ইত্যাদি শুরু করে। এতে তাদের ব্যক্তিগত উন্নতি ঘটার পাশাপাশি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরি হয়।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব
নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কার্যক্রম এলাকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় বেকারত্ব কমাতে সহায়তা করছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা কেবল নিজেরাই কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন না, বরং তারা অন্যদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম হচ্ছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা দক্ষতাসম্পন্ন হওয়ায় তাদের কাজের মান ভালো হয় এবং তারা উচ্চ বেতনে চাকরি পেতে সক্ষম হয়। এই দক্ষ জনশক্তি দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যারা বিদেশে কাজ করেন, তারা দেশের জন্য রেমিট্যান্স এনে দেয়, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নেত্রকোণা TTC ভবিষ্যতে আরো আধুনিক ও যুগোপযোগী কোর্স চালু করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কোর্স, যা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে আরো বেশি দক্ষ করে তুলবে। এছাড়াও, অনলাইন প্রশিক্ষণ এবং ই-লার্নিং সুবিধা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে, যাতে দূরবর্তী শিক্ষার্থীরাও এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে, যাতে বৈদেশিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি করা যায়। এতে দেশের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি দক্ষতা গঠনের কেন্দ্র। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের পেশাগত জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বেকারত্ব দূরীকরণে এই ধরনের কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা অপরিসীম।
➤ নেত্রকোণা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে- ক্লিক করুন