ফুড প্রসেসিংয়ের পরিবেশগত প্রভাব
- আপডেট সময় ০২:৩৫:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪
- / ১১০ বার পড়া হয়েছে
ফুড প্রসেসিংয়ের পরিবেশগত প্রভাব
ফুড প্রসেসিং শিল্পে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিবেশের উপর নানা প্রভাব রয়েছে। এটি খাদ্যকে দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণযোগ্য, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর করতে সহায়ক হলেও এর পরিবেশগত প্রভাব বিস্তৃত ও জটিল। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত জ্বালানি, পানি, রাসায়নিক পদার্থ এবং প্যাকেজিং উপকরণগুলির কারণে বায়ুদূষণ, জলদূষণ এবং উষ্ণায়নের মতো গুরুতর প্রভাব দেখা দেয়। এ প্রবন্ধে আমরা ফুড প্রসেসিংয়ের বিভিন্ন ধাপ ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করবো এবং এই সমস্যাগুলোর সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে জানবো।
ফুড প্রসেসিংয়ের বিভিন্ন ধাপ ও এর প্রভাব
ফুড প্রসেসিং একাধিক ধাপে বিভক্ত: খাদ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, এবং পরিবহন। প্রতিটি ধাপেই নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার হয় এবং তা পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলে।
১. সংগ্রহ ও উৎপাদন: খাদ্য উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজ করা হয় যা মাটি, পানি এবং বায়ুর গুণগত মানের উপর প্রভাব ফেলে। বাণিজ্যিক কৃষি ব্যবস্থায় প্রচুর পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় যা মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয় এবং জলাধারে নেমে গিয়ে জলদূষণ ঘটায়। এগুলো জীববৈচিত্র্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
২. প্রক্রিয়াকরণ: ফুড প্রসেসিং-এর মূল ধাপটি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ। এই পর্যায়ে প্রচুর পরিমাণে পানি ও জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ফলমূল ও শাকসবজি ধোয়া, মাংস প্রক্রিয়াজাত করা এবং বিভিন্ন ধরণের খাদ্য সংরক্ষণে তাপ ও ঠান্ডা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা অধিক শক্তি খরচ করে। এই শক্তির বেশিরভাগই জীবাশ্ম জ্বালানির মাধ্যমে উৎপাদিত হয়, যা কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত করে।
৩. প্যাকেজিং: ফুড প্রসেসিং-এর একটি বড় অংশ হল প্যাকেজিং, যা খাদ্যকে সংরক্ষণে সহায়ক হলেও পরিবেশের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বিশেষত প্লাস্টিক প্যাকেজিং ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যা জৈব অবক্ষয়ের জন্য হাজার হাজার বছর সময় নেয় এবং সামুদ্রিক ও স্থলজ প্রাণীজগতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্যাকেজিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কাগজ, অ্যালুমিনিয়াম এবং অন্যান্য পদার্থও পরিবেশের ক্ষতি করে, কারণ এগুলি উৎপাদনে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহৃত হয় এবং পণ্যগুলির নিষ্পত্তি করলে তা ভূমির দুষণ ঘটায়।
৪. পরিবহন ও বিতরণ: খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শেষে খাদ্যবস্তু গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে গাড়ি, বিমান ও জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় জ্বালানি ব্যবহার হয় যা কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ ঘটায়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্যবস্তু ব্যবহার কম হওয়ায় অনেক সময় খাদ্যকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে নিয়ে যেতে হয়, যা পরিবেশের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
পরিবেশের উপর খাদ্য অপচয়ের প্রভাব
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের আরেকটি বড় প্রভাব হলো খাদ্য অপচয়। প্রসেসিংয়ের সময় অনেক খাদ্যবস্তু নষ্ট হয়, যা মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয় বা অন্য কোনো উপায়ে ফেলে দেওয়া হয়। এই অপচয়কৃত খাদ্য পচন প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস তৈরি করে, যা কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। ফলে ফুড প্রসেসিং থেকে খাদ্য অপচয় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে দায়ী।
ফুড প্রসেসিং-এর সমস্যার সমাধানের উপায়
ফুড প্রসেসিং-এর পরিবেশগত প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১. টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি: কৃষিতে পরিবেশবান্ধব ও জৈবিক পদ্ধতি অবলম্বন করা জরুরি। সার ও কীটনাশক কমিয়ে আনা, কম পানি ব্যবহার করা এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারে খাদ্য উৎপাদনের প্রক্রিয়া টেকসই করা সম্ভব। অর্গানিক চাষ ও স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে পরিবেশের উপর চাপ কমানো যায়।
২. শক্তি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহার: খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলিকে আরও দক্ষ এবং শক্তি সাশ্রয়ী করে তোলা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বায়োগ্যাস বা সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো যেতে পারে। এর পাশাপাশি, ফুড প্রসেসিং প্লান্টগুলিতে উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি প্রয়োগ করা উচিত যাতে খাদ্য অপচয় কমানো যায়।
৩. বিকল্প প্যাকেজিং উপকরণ: প্লাস্টিকের পরিবর্তে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং জৈব-অবক্ষয়যোগ্য উপকরণ যেমন কাগজ, কাঁচ বা বায়োপ্লাস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, কম প্যাকেজিং নীতি এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং ব্যবহারেও পরিবেশের উপর প্রভাব কমানো সম্ভব।
৪. খাদ্য অপচয় হ্রাস: ফুড প্রসেসিং এবং সরবরাহ চেইনগুলিতে খাদ্য অপচয় কমানোর জন্য আরও কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। খাদ্য পুনরায় ব্যবহার করা, কমপোস্ট করা, এবং খাদ্য বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। তাছাড়া, খাদ্য অপচয় কমাতে খাদ্যদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করে উদ্বৃত্ত খাদ্য পুনরায় বিতরণ করা যেতে পারে।
ফুড প্রসেসিং-এর পরিবেশগত প্রভাব অনেক গভীর ও ব্যাপক। এর প্রত্যেকটি ধাপ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে এবং দূষণ ঘটায়। তাই ফুড প্রসেসিং-এর টেকসই উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা জরুরি। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার, এবং খাদ্য অপচয় রোধের মাধ্যমে এই শিল্পকে আরও পরিবেশবান্ধব করে তোলা সম্ভব।
➤ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর ফুড প্রসেসিং লেভেল- ২ CS ডাউনলোড এর জন্য ভিজিট করতে – ক্লিক করুন
বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে বিভিন্ন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষতার লে্ভেল অনুযায়ী যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। যার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোন আপডেট তথ্য পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্কিলস.ওআরজি এর ফেসবুক পেজ, কমিউনিটি গ্রুপ অথবা ওয়েবসাইট ও গ্রুপ থেকে।