মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Munshiganj Technical Training Centre, MTTC)
- আপডেট সময় ০১:০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৬৫ বার পড়া হয়েছে
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা মুন্সিগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দেশের দক্ষ জনশক্তি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং যুবসমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার অবদান অপরিসীম। মুন্সিগঞ্জ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এই দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সফল উদ্যোগ, যা যুবসমাজকে দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মমুখী করে তুলছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সরকারের উদ্যোগে, দেশের তরুণ প্রজন্মকে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার লক্ষ্যে। বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের যৌথ প্রচেষ্টায় এই কেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হয়, এবং মুন্সিগঞ্জ টিটিসি সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য হলো তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা। এই কেন্দ্রের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। এটি শুধু স্থানীয় শ্রমবাজারের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্যও প্রশিক্ষিত কর্মী সরবরাহ করে থাকে। কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে এ প্রতিষ্ঠানটি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে এবং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করছে।
অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা
মুন্সিগঞ্জ টিটিসি উন্নতমানের অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে গঠিত। এখানে আধুনিক ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশপ, ক্লাসরুম এবং কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি যেমন ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, মেকানিক্যাল সরঞ্জাম, আইটি ডিভাইস ইত্যাদি সর্বদা আপডেট করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য লাইব্রেরি, হোস্টেল এবং অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে।
কোর্সসমূহ
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মমুখী ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে। এই কোর্সগুলো স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী উভয় রকমের হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী কোর্স
1. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং: এ কোর্সটি সাধারণত চার বছরের হয়, যেখানে ইলেকট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, সিভিল, ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপর গভীরতর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
2. অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং: এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কোর্স যেখানে শিক্ষার্থীরা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
স্বল্পমেয়াদী কোর্স
1. ওয়েল্ডিং এবং ফেব্রিকেশন: এটি একটি স্বল্পমেয়াদী কোর্স, যেখানে শিক্ষার্থীরা আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখে।
2. ইলেকট্রিক্যাল ইন্সটলেশন: এই কোর্সে ইলেকট্রিক্যাল সার্কিট তৈরি, ইলেকট্রিক্যাল ডিভাইসের মেরামত এবং ইন্সটলেশন শিখানো হয়।
3. কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন: তথ্য প্রযুক্তির ওপর দক্ষতা অর্জনের জন্য এই কোর্সটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীরা মাইক্রোসফট অফিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, এবং ডাটাবেস ম্যানেজমেন্টের মতো বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।
4. সেলাই ও গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ: নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই গার্মেন্টস খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সেলাই ও পোশাক প্রস্তুতির ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন- যারা স্বল্প সময়ের মধ্যে দক্ষতা অর্জন করতে চান, তাদের জন্য এখানে বিভিন্ন শর্ট কোর্স রয়েছে।
প্রশিক্ষণ পদ্ধতি
মুন্সিগঞ্জ টিটিসিতে শিক্ষণ পদ্ধতি খুবই কার্যকর এবং আধুনিক। এখানে তত্ত্বীয় এবং ব্যবহারিক উভয় ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ শেখানো হয়, যা তাদের বাস্তব জীবনে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকল্পে অংশগ্রহণ করতে হয়, যা তাদের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়ায়।
কর্মসংস্থান
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়। এই কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীরা দেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, নির্মাণ খাত, গার্মেন্টস খাত এবং আইটি সেক্টরে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। প্রবাসে কাজ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাও এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করছে।
বাংলাদেশ সরকারের “স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম” (এসইআইপি) এর অধীনে শিক্ষার্থীরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বিনামূল্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সাথেও মুন্সিগঞ্জ টিটিসি’র চুক্তি রয়েছে, যার ফলে শিক্ষার্থীরা সহজেই চাকরির সুযোগ পায়।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা। প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং এর সাথে নতুন দক্ষতা অর্জন করার প্রয়োজনীয়তাও বেড়ে চলেছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
ভবিষ্যতে এই কেন্দ্রটির পরিকল্পনা হচ্ছে আরো উন্নতমানের প্রযুক্তি সংযোজন করা, প্রশিক্ষকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা। বিশেষ করে আইটি, ইলেকট্রনিক্স, এবং রোবোটিক্সের মতো উন্নত প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া এই কেন্দ্রের লক্ষ্য।
মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশের যুবসমাজকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী করে তুলছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দক্ষ কর্মী তৈরি করার জন্য এই ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে।
➤ মুন্সিগঞ্জ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে- ক্লিক করুন