মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (Meherpur Technical Training Centre)
- আপডেট সময় ০২:৩১:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৪০ বার পড়া হয়েছে
মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (মেহেরপুর টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার বা মেহেরপুর টিটিসি) বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি স্থানীয় যুবসমাজকে কারিগরি দক্ষতা প্রদান করে, যাতে তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকে থাকতে পারে। মেহেরপুর টিটিসি শিক্ষার্থীদের দক্ষ ও প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম করে তোলার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করছে।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস:
মেহেরপুর টিটিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলত স্থানীয় যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯০-এর দশকে দেশব্যাপী দক্ষতা উন্নয়ন এবং কারিগরি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন স্থানে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন শুরু করে। এই উদ্যোগের ফলস্বরূপ মেহেরপুরের মতো অপেক্ষাকৃত ছোট এবং পিছিয়ে থাকা অঞ্চলে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, যা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে।
অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা:
মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আধুনিক অবকাঠামো দ্বারা সুসজ্জিত। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ল্যাব, কর্মশালা, আধুনিক ক্লাসরুম এবং আইটি ল্যাব। শিক্ষার্থীরা এখানে প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন কারিগরি যন্ত্রপাতি পরিচালনা শিখতে পারে। ল্যাবরেটরি এবং কর্মশালাগুলোতে মেশিন, সরঞ্জাম এবং কম্পিউটারসহ অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা বাস্তব দক্ষতা অর্জন করে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগসহ তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষার সুযোগও রয়েছে।
কোর্সসমূহ:
মেহেরপুর টিটিসি বিভিন্ন ধরনের কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক কোর্স পরিচালনা করে। শিক্ষার্থীরা এখানে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী উভয় ধরণের কোর্সে অংশ নিতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি প্রধান কোর্স হলো:
1. ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং: এটি একটি চার বছরের কোর্স, যেখানে শিক্ষার্থীরা মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন শাখায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে। এই কোর্সটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা শিল্পক্ষেত্রে কাজ করার মতো যথাযথ দক্ষতা অর্জন করে।
2. স্বল্পমেয়াদী কোর্স: মেহেরপুর টিটিসি বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদী কোর্স পরিচালনা করে, যা শিক্ষার্থীদের দ্রুত কর্মজীবনে প্রবেশের সুযোগ দেয়। এর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রিক্যাল রক্ষণাবেক্ষণ, মোটর গাড়ি মেকানিক্স, ওয়েল্ডিং এবং প্লাম্বিং।
3. আইসিটি কোর্স: বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব বাড়ছে। মেহেরপুর টিটিসি বিভিন্ন আইসিটি কোর্স যেমন কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন এবং ওয়েব ডেভেলপমেন্টের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
আরও পড়ুন- সাতক্ষীরা টিটিসি একটি আধুনিক অবকাঠামো সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান।
প্রশিক্ষণের পদ্ধতি:
মেহেরপুর টিটিসি শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখার সুযোগ করে দেয়, যেখানে তারা তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জন করতে পারে। প্রতিটি কোর্সে ল্যাবরেটরি এবং কর্মশালায় সরাসরি কাজের সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেশিন এবং যন্ত্রপাতি পরিচালনার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা তাদের কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করে। প্রশিক্ষণের পদ্ধতিতে শিক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলোর সমাধানে দক্ষ করে তোলেন।
কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন:
মেহেরপুর টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতগুলোতে কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে। মেহেরপুর টিটিসি এই প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বিশেষ করে, প্রবাসে যারা কর্মসংস্থানের জন্য আগ্রহী, তারা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে আন্তর্জাতিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এতে তাদের আর্থিক উন্নতি সাধিত হচ্ছে এবং দেশের রেমিট্যান্স আয় বাড়ছে।
বৈশ্বিক যোগাযোগ ও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ:
মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই কেন্দ্রটি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং অন্যান্য কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা করে শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর মতো সংস্থাগুলো মেহেরপুর টিটিসির প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। এর ফলে, শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জন করে এবং বৈশ্বিক কর্মবাজারে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সক্ষম হয়।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা:
মেহেরপুর টিটিসির অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো ক্রমাগত প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে প্রশিক্ষণের মান বজায় রাখা। কারিগরি খাতে দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির প্রভাব এবং শ্রমবাজারের চাহিদা বিবেচনায় রেখে নতুন নতুন কোর্স চালু করা এবং প্রশিক্ষণের মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানটি নতুন প্রযুক্তি, দক্ষ প্রশিক্ষক এবং উন্নত সরঞ্জামের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও আধুনিক করতে কাজ করছে।
মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাংলাদেশের দক্ষ জনশক্তি তৈরির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। এটি স্থানীয় যুবসমাজকে আত্মনির্ভরশীল করতে এবং তাদেরকে কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক দক্ষতা প্রদান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মেহেরপুর টিটিসি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা দেশ এবং বিদেশে সাফল্যের সাথে কাজ করছে। দক্ষতার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে।
➤ মেহেরপুর কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে- ক্লিক করুন