০২:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

রমজানে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

কনক ফেরদৌসী
  • আপডেট সময় ০৯:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ৭৬ বার পড়া হয়েছে

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়, যেখানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। রোজা রাখার সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকতে হয়, যা শরীরের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই এই সময়ে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোজার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

রোজার সময় শরীরের পরিবর্তন

রোজা রাখার ফলে শরীরের শক্তির প্রধান উৎস গ্লুকোজের স্তর হ্রাস পায়। সাধারণত, শেষ খাবার গ্রহণের ৮ ঘণ্টা পর শরীর সঞ্চিত গ্লুকোজ ব্যবহার শুরু করে। এরপর শক্তির জন্য চর্বি গলিয়ে ব্যবহার করে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে, দীর্ঘ সময় খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ফলে পানিশূন্যতা ও অবসাদ দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার ও সেহরির সময় সুষম পুষ্টি ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

সেহরিতে করণীয়

সেহরি হলো দিনের প্রথম খাবার, যা রোজার সময় শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। সেহরিতে এমন খাবার নির্বাচন করা উচিত যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে।

  • জটিল শর্করা: হোল গ্রেইনস যেমন ওটস, বার্লি, লাল চাল বা রুটি ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি প্রদান করে।
  • প্রোটিন: ডাল, ডিম, কম চর্বিযুক্ত দুধ বা দই পেশি মজবুত রাখতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • শাকসবজি ও ফলমূল: শসা, টমেটো, লেটুস, তরমুজ ইত্যাদি পানি ও আঁশসমৃদ্ধ, যা হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ইফতারে করণীয়

ইফতার দিনের শেষ খাবার, যা রোজা ভাঙার জন্য গ্রহণ করা হয়। ইফতারে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা উচিত।

  • খেজুর দিয়ে শুরু: খেজুর প্রাকৃতিক চিনি, আঁশ, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস, যা দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: পানিশূন্যতা রোধে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে দেড় থেকে দুই লিটার পানি বা তরল পানীয় গ্রহণ করা উচিত।
  • হালকা স্যুপ ও সালাদ: মুরগি বা সবজির স্যুপ এবং তাজা সালাদ হজমে সহায়তা করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • প্রোটিন ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার: গ্রিলড মুরগি, মাছ, ডাল, ব্রাউন রাইস বা হোল গ্রেইন রুটি শক্তি ও পুষ্টি প্রদান করে।

এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার

রমজানে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

  • ভাজাপোড়া ও মশলাযুক্ত খাবার: এসব খাবার হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: এগুলো পুষ্টিগুণ কম এবং রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি ও কোমল পানীয় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, যা পানিশূন্যতা বাড়ায়।

শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম

রমজানে শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম বজায় রাখা সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  • হালকা ব্যায়াম: ইফতারের পর হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং হজমে সহায়তা করে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: সেহরি ও ইবাদতের জন্য রাতে জাগতে হয়, তাই দিনে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা উচিত, যাতে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

রমজান মাসে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম বজায় রেখে রোজার মূল উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে রমজান মাসকে আরও অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করে তোলা যায়।

বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে বিভিন্ন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষতার লে্ভেল অনুযায়ী যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। যার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোন আপডেট তথ্য পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্কিলস.ওআরজি  এর ফেসবুক পেজ,  কমিউনিটি গ্রুপ  অথবা  ওয়েবসাইট ও  গ্রুপ  থেকে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন ?

পোস্টটি শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

কনক ফেরদৌসী

আসসালামুয়ালাইকুম আমি কনক ফেরদৌস। একজন ফুড এন্ড নিউট্রেশন এক্সপার্ট। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (BTEB) ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA) কর্তৃক, স্কিল লেভেল সম্পন্ন করেছি। bdskills.org স্কিলস কন্টেন্ট প্লাটফরমে আমি শিক্ষার্থীদের জন্য ফুড এন্ড ব্যাভারেজ প্রডাকশন, সার্ভিস, প্রসেসিং এবং কোয়ালিটি কন্ট্রোল সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

রমজানে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

আপডেট সময় ০৯:৩০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

রমজান মাস মুসলিমদের জন্য পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি সময়, যেখানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। রোজা রাখার সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকতে হয়, যা শরীরের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে। তাই এই সময়ে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোজার মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়।

রোজার সময় শরীরের পরিবর্তন

রোজা রাখার ফলে শরীরের শক্তির প্রধান উৎস গ্লুকোজের স্তর হ্রাস পায়। সাধারণত, শেষ খাবার গ্রহণের ৮ ঘণ্টা পর শরীর সঞ্চিত গ্লুকোজ ব্যবহার শুরু করে। এরপর শক্তির জন্য চর্বি গলিয়ে ব্যবহার করে, যা ওজন কমাতে সহায়তা করে। তবে, দীর্ঘ সময় খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকার ফলে পানিশূন্যতা ও অবসাদ দেখা দিতে পারে। তাই ইফতার ও সেহরির সময় সুষম পুষ্টি ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

সেহরিতে করণীয়

সেহরি হলো দিনের প্রথম খাবার, যা রোজার সময় শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। সেহরিতে এমন খাবার নির্বাচন করা উচিত যা ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে।

  • জটিল শর্করা: হোল গ্রেইনস যেমন ওটস, বার্লি, লাল চাল বা রুটি ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘ সময় শক্তি প্রদান করে।
  • প্রোটিন: ডাল, ডিম, কম চর্বিযুক্ত দুধ বা দই পেশি মজবুত রাখতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
  • শাকসবজি ও ফলমূল: শসা, টমেটো, লেটুস, তরমুজ ইত্যাদি পানি ও আঁশসমৃদ্ধ, যা হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়তা করে।

ইফতারে করণীয়

ইফতার দিনের শেষ খাবার, যা রোজা ভাঙার জন্য গ্রহণ করা হয়। ইফতারে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করা উচিত।

  • খেজুর দিয়ে শুরু: খেজুর প্রাকৃতিক চিনি, আঁশ, পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস, যা দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
  • পর্যাপ্ত পানি পান: পানিশূন্যতা রোধে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে দেড় থেকে দুই লিটার পানি বা তরল পানীয় গ্রহণ করা উচিত।
  • হালকা স্যুপ ও সালাদ: মুরগি বা সবজির স্যুপ এবং তাজা সালাদ হজমে সহায়তা করে এবং পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • প্রোটিন ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার: গ্রিলড মুরগি, মাছ, ডাল, ব্রাউন রাইস বা হোল গ্রেইন রুটি শক্তি ও পুষ্টি প্রদান করে।

এড়িয়ে চলা উচিত এমন খাবার

রমজানে কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

  • ভাজাপোড়া ও মশলাযুক্ত খাবার: এসব খাবার হজমে সমস্যা, অ্যাসিডিটি ও ওজন বৃদ্ধি করতে পারে।
  • অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার: এগুলো পুষ্টিগুণ কম এবং রক্তে শর্করার স্তর দ্রুত বাড়ায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: চা, কফি ও কোমল পানীয় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, যা পানিশূন্যতা বাড়ায়।

শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম

রমজানে শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম বজায় রাখা সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

  • হালকা ব্যায়াম: ইফতারের পর হালকা হাঁটা বা স্ট্রেচিং হজমে সহায়তা করে এবং শরীরকে চাঙ্গা রাখে।
  • পর্যাপ্ত ঘুম: সেহরি ও ইবাদতের জন্য রাতে জাগতে হয়, তাই দিনে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা উচিত, যাতে শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।

রমজান মাসে সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। সেহরি ও ইফতারে পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান, শারীরিক কার্যক্রম ও বিশ্রাম বজায় রেখে রোজার মূল উদ্দেশ্য পূরণ করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মাধ্যমে রমজান মাসকে আরও অর্থবহ ও ফলপ্রসূ করে তোলা যায়।

বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে বিভিন্ন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষতার লে্ভেল অনুযায়ী যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। যার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোন আপডেট তথ্য পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্কিলস.ওআরজি  এর ফেসবুক পেজ,  কমিউনিটি গ্রুপ  অথবা  ওয়েবসাইট ও  গ্রুপ  থেকে।

গ্রাফিক্স ডিজাইন ?