জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর সিরামিক সেক্টর কী? What is NSDA Ceramic Sector?
- আপডেট সময় ১১:৫৬:৪৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ২৭৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন শিল্প খাত, তার মধ্যে সিরামিক শিল্প একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের খাতগুলোর দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। সিরামিক সেক্টরটি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা দক্ষতাভিত্তিক উন্নয়নের মাধ্যমে অধিকতর কার্যকর হতে পারে।
সিরামিক সেক্টরের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ সিরামিক শিল্প বলতে বোঝায় মাটির তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য, যেমন- টাইলস, টেবিলওয়্যার, স্যানিটারি ওয়্যার ইত্যাদি উৎপাদন। বাংলাদেশে এই শিল্পটি ক্রমবর্ধমান ভাবে জনপ্রিয় হচ্ছে, যার প্রধান কারণ দেশীয় চাহিদা ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদার সমানুপাতিক বৃদ্ধি। বাংলাদেশের সিরামিক শিল্প দ্রুত বিস্তৃতি লাভ করছে এবং বর্তমানে এটি একটি অন্যতম রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় ৬০টিরও বেশি সিরামিক কারখানা রয়েছে, যা দেশের মোট উৎপাদন চাহিদার ৮০% পূরণ করে এবং বেশ কিছু রপ্তানি হয়।
NSDA এর ভূমিকাঃ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (NSDA) সিরামিক শিল্পের প্রসারের জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে শ্রমশক্তির দক্ষতা উন্নয়ন এবং তাদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষিত করে তোলা। দক্ষতার অভাবে শিল্পের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেতে পারে, তাই NSDA-এর কাজ হলো দক্ষ কর্মী গড়ে তোলার মাধ্যমে এই শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার প্রসার ঘটানো।
NSDA বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এবং কারিকুলাম তৈরি করে। এ প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিল ও বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থা এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে। এর ফলে কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়ন হয় এবং তারা শিল্পের পরিবর্তনশীল চাহিদার সাথে মানিয়ে চলতে পারে।
দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্বঃ সিরামিক শিল্পের দক্ষতা উন্নয়ন একটি জটিল ও বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। এই শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি এবং মেশিনারির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে, যা দক্ষ শ্রমিক এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের চাহিদা বাড়িয়েছে। আধুনিক মেশিন চালানো, উৎপাদন প্রক্রিয়ার মান নিয়ন্ত্রণ, এবং পরিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রয়োজন। এসব বিষয়ে কার্যকরী দক্ষতা না থাকলে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে।
NSDA এর কার্যক্রমঃ NSDA সিরামিক সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়নে একাধিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে। এই প্রশিক্ষণগুলো নিম্নলিখিত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়:
- ১। প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন: সিরামিক উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপ যেমন মাটির প্রক্রিয়াজাতকরণ, ডিজাইন, গ্লেজিং, ফায়ারিং ইত্যাদি বিষয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
- ২। মান নিয়ন্ত্রণ এবং পরীক্ষা: সিরামিক পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কর্মীদের পণ্য গুণমান পরীক্ষা এবং মান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে সাহায্য করে।
- ৩। স্যানিটারি এবং পরিবেশবান্ধব উৎপাদন: পরিবেশ বান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া এবং স্যানিটারি ওয়্যার উৎপাদনে দক্ষতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মীরা পরিবেশ বান্ধব কাঁচামাল এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে।
- ৪। বিপণন ও ব্যবস্থাপনা: উৎপাদন প্রক্রিয়া ছাড়াও বিপণন ও ব্যবস্থাপনা কৌশল নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা হয়, যা কর্মীদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের পণ্যের বিক্রয় কৌশল নিয়ে দক্ষ করে তোলে।
চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
সিরামিক সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়নে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন:
- ✔ প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা: অনেক শ্রমিক এখনও আধুনিক মেশিন এবং প্রযুক্তি চালনায় দক্ষ নয়। তাই প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি।
- ✔ অপর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: বিশেষ করে অঞ্চলভিত্তিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অভাব রয়েছে, যা দক্ষ শ্রমিক গঠনে বাধা সৃষ্টি করে।
- ✔ মানবসম্পদের অভাব: দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি রয়েছে, যা পণ্য উৎপাদন এবং মান নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এ চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য NSDA কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি দেশে নতুন নতুন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করছে এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ সিলেবাস তৈরি করছে। পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মসংস্থান ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করছে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাঃ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে সিরামিক সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়ন ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশে সিরামিক শিল্পের সঠিক পরিকল্পনা ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন এবং রপ্তানির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব।
বাংলাদেশের সিরামিক শিল্পকে আরও শক্তিশালী করতে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই শিল্পের উৎপাদনশীলতা এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সিরামিক শিল্পে দেশের অবস্থান আরও সুসংহত করা সম্ভব।
বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে বিভিন্ন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষতার লে্ভেল অনুযায়ী যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। যার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোন আপডেট তথ্য পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্কিলস.ওআরজি এর ফেসবুক পেজ, কমিউনিটি গ্রুপ অথবা ওয়েবসাইট ও গ্রুপ থেকে।