হাউজকিপিং টিপস ও ট্রিকস: দ্রুত এবং কার্যকর পরিষ্কার পদ্ধতি
হাউজকিপিং শুধু একটি কাজ নয়, এটি একটি দক্ষতা এবং শিল্পও বটে। দ্রুত এবং কার্যকর পরিষ্কার পদ্ধতি রপ্ত করা না গেলে হোটেল, অফিস বা বাড়ির পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই, সময় বাঁচিয়ে এবং কম পরিশ্রমে কিভাবে ঘরবাড়ি কিংবা কর্মস্থল পরিষ্কার রাখা যায়, সে সম্পর্কে কিছু কার্যকর টিপস ও ট্রিকস এখানে তুলে ধরা হলো।
১. পরিষ্কারের পরিকল্পনা করুন
পরিষ্কারের কাজ শুরু করার আগে একটি পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। কোন কাজটি আগে করবেন, কী কী সরঞ্জাম লাগবে, কতটুকু সময় লাগতে পারে – এসব বিবেচনায় রেখে একটি তালিকা তৈরি করুন। এতে কাজের গতি বাড়বে এবং অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট হবে না।
২. উপযুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার করুন
যেকোনো কাজ দ্রুত ও দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে ভালো সরঞ্জাম থাকা দরকার। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম হলো:
- মাইক্রোফাইবার কাপড় (ধুলো ঝাড়ার জন্য)
- হাই-সাকশন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার
- মাল্টি-পারপাস ক্লিনার
- টয়লেট ব্রাশ ও ডিসইনফেকটেন্ট
- গ্লাভস ও মাস্ক (স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য)
৩. উপর থেকে নিচে পরিষ্কার করুন
পরিষ্কার করার সময় উপরের অংশ (যেমন, ছাদ, ফ্যান, জানালা) আগে পরিষ্কার করুন, তারপর নিচের অংশে (যেমন, মেঝে)। এতে ধুলো- ময়লা নিচে পড়বে এবং একবারে মেঝে পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
৪. সময় বাঁচাতে একসঙ্গে কাজ করুন
যদি একাধিক ব্যক্তি পরিষ্কার কাজে অংশ নেয়, তবে সময় বাঁচাতে ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব ভাগ করে নিন। একজন জানালা পরিষ্কার করলে, অন্যজন ফ্লোর মুছতে পারে। এতে দ্রুত ও সমন্বিতভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।
৫. এক হাতে দুটি কাজ করার অভ্যাস করুন
যদি সম্ভব হয়, তাহলে একই সময়ে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করুন। যেমন, কাপড় ধোয়ার সময় সিংক পরিষ্কার করা বা রান্নাঘরে কিছু অপেক্ষা করতে হলে সেই সময়ে অন্য ছোটখাট কাজ করা।
৬. প্রতিদিন কিছুক্ষণ পরিষ্কার করুন
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন অল্প সময় ব্যয় করাই ভালো। প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ মিনিট সময় নিয়ে কিছু অংশ পরিষ্কার করলে একবারে বড় পরিসরে পরিষ্কার করার ঝামেলা কমবে।
৭. স্মার্ট ক্লিনিং পণ্য ব্যবহার করুন
বর্তমানে বাজারে অনেক উন্নত ক্লিনিং প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যা পরিষ্কার প্রক্রিয়াকে সহজ এবং দ্রুত করে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, স্প্রে ক্লিনার, অটোমেটিক স্ক্রাবার, ডিসইনফেকটিং ওয়াইপস ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. রান্নাঘর ও বাথরুমে বিশেষ যত্ন নিন
রান্নাঘর ও বাথরুম সবচেয়ে বেশি নোংরা হয় এবং ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর উপযুক্ত স্থান। তাই এসব স্থানে প্রতিদিন পরিষ্কার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- রান্নার পরপরই চুলা পরিষ্কার করুন।
- সিঙ্ক এবং কাউন্টারটপ প্রতিদিন ডিসইনফেক্ট করুন।
- বাথরুমের ফ্লোর ও টয়লেট প্রতি দিন পরিষ্কার করুন।
৯. দ্রুত ধুলো ঝাড়ার কৌশল
ধুলো পরিষ্কারের সময় সবচেয়ে ভালো উপায় হলো মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করা। এটি সাধারণ কাপড়ের তুলনায় বেশি কার্যকর এবং দ্রুত কাজ করে। এছাড়া, ঝাড়ু বা ব্রাশ ব্যবহারের সময় হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে ধুলো মুছে ফেললে ধুলো বাতাসে উড়বে না।
১০. দুর্গন্ধ দূর করার সহজ উপায়
পরিষ্কার করার পাশাপাশি ঘরে সুন্দর সুবাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
- এক কাপ বেকিং সোডা এবং লেবুর রস মিশিয়ে রান্নাঘরে রাখলে দুর্গন্ধ দূর হয়।
- লিভিং রুমে সুগন্ধি মোমবাতি বা এসেনশিয়াল অয়েল ডিফিউজার ব্যবহার করুন।
- বাথরুমের দুর্গন্ধ দূর করতে এক টেবিল চামচ ভিনেগার টয়লেটে দিন।
১১. নিয়মিত অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ফেলে দিন
পরিষ্কার রাখতে হলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমিয়ে না রাখাই ভালো। প্রতি সপ্তাহে অপ্রয়োজনীয় জিনিস ফেলে দিন বা দান করুন। এতে ঘর গোছানো সহজ হবে।
১২. ফার্নিচার ও গৃহসজ্জা পরিষ্কার রাখার উপায়
- ফার্নিচারের ধুলো পরিষ্কার করতে ভেজা কাপড় ব্যবহার করুন।
- কাঠের আসবাবের জন্য বিশেষ কাঠের পলিশ ব্যবহার করুন।
- সোফা বা বেডরুমের ম্যাট্রেস নিয়মিত রোদে দিয়ে নিন।
১৩. ফ্লোর পরিষ্কারের সহজ পদ্ধতি
- ফ্লোর পরিষ্কারের জন্য গরম পানির সাথে কিছুটা ভিনেগার মিশিয়ে মোপ করুন।
- সিরামিক বা মার্বেল ফ্লোরের জন্য হালকা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করুন।
- কাঠের মেঝেতে বেশি পানি ব্যবহার করবেন না, এতে ক্ষতি হতে পারে।
১৪. শিশু ও পোষা প্রাণীর জন্য নিরাপদ পরিচ্ছন্নতা
যদি বাড়িতে শিশু বা পোষা প্রাণী থাকে, তবে নিরাপদ এবং বিষমুক্ত ক্লিনিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন। যেমন, লেবুর রস, বেকিং সোডা এবং ভিনেগার দিয়ে তৈরি প্রাকৃতিক ক্লিনার।
দ্রুত এবং কার্যকরভাবে পরিষ্কার করার জন্য পরিকল্পনা, সঠিক সরঞ্জাম, এবং নিয়মিত রুটিন মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। হাউজকিপিং শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য এবং মানসিক শান্তির জন্যও অত্যন্ত জরুরি। উপরের টিপস ও ট্রিকস মেনে চললে সহজেই পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব হবে।
হাউজ কিপিং স্কিলের চাহিদা
বিশ্বব্যাপী, হোটেল এবং হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধির ফলে পেশাদার হাউজ কিপারদের চাহিদা অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকার অনেক দেশে দক্ষ হাউজ কিপারদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদার কারণেই NSDA-এর মতো সংস্থাগুলো দক্ষ কর্মী তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে।
NSDA-এর অধীনে হাউজ কিপিং স্কিল লেভেলের প্রশিক্ষণ একজন ব্যক্তিকে শুধুমাত্র দক্ষ কর্মী হিসেবে তৈরি করে না, বরং তাকে আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতামূলকভাবে টিকে থাকার যোগ্য করে তোলে। একজন পেশাদার হাউজ কিপার হিসেবে কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণার্থীরা প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতা, এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যা তাদের জীবন ও ক্যারিয়ারে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।
➤ জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর হাউজ কিপিং স্কিল লেভেল– CS ডাউনলোড এর জন্য ভিজিট করতে – ক্লিক করুন
বর্তমানে সরকার বিনামূল্যে বিভিন্ন দক্ষতা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর মূল্যায়নের মাধ্যমে দক্ষতার লে্ভেল অনুযায়ী যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের সনদ প্রদান করা হচ্ছে। যার প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত যেকোন আপডেট তথ্য পেতে ঘুরে আসতে পারেন বিডিস্কিলস.ওআরজি এর ফেসবুক পেজ, কমিউনিটি গ্রুপ অথবা ওয়েবসাইট ও গ্রুপ থেকে।